রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০২ পূর্বাহ্ন
বাগেরহাটে হতদরিদ্রদের বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, সরকারি ঘর দেওয়ার নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।
ফকিরহাট উপজেলার পিলজংগ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোস্তফা কামাল হারুনের বিরুদ্ধে এসব অনিয়ম ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এলাকার হতদরিদ্ররা।
এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রহিমা সুলতানা বুশরাকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. শাহনাজ পারভীন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয়রা জানান, মোস্তফা কামাল হারুন ইউপি সদস্য হওয়ার পর থেকে এলাকার মানুষদের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে টাকা গ্রহন ও আত্মসাত করছেন। জন্মনিবন্ধনের জন্যও টাকা নেন তিনি। গরিব ও অশিক্ষিত মানুষরা এক ধরনের বাধ্য হয়েই টাকা দেয় তাকে।
পিলজংগ গ্রামের দুই সন্তানের জনক জন্মান্ধ ফরহাদ সরদার বলেন, জন্মের পর থেকে চোখে দেখতে পাই না। হারুণ মেম্বরকে বলেছিলাম আমাকে একটা প্রতিবন্ধী কার্ড দেন। সে আমার আইডি কার্ড ও ছবি নিয়েছে। অ্যাকাউন্ট খোলার কথা বলে দুইশ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু অনেক দিন হয়ে গেলেও আমাকে কোন কার্ড দেয়নি। দুইটা বাচ্চা ও পরিবার নিয়ে খূব কষ্টে আছি। যদি আমাকে একটি প্রতিবন্ধী কার্ড দেওয়া যায়, তাহলে আমার খুব উপকার হবে।
দিন মজুর কুদ্দুস মোড়ল ও মো. খলিল শেখ বলে, ভাঙ্গাচোরা ঘরে থাকি। ঘর থেকে পানি পরে। মেম্বার সরকারি ঘর দেওয়ার জন্য তিন হাজার টাকা দাবি করেন। সাত-আট মাস আগে তিন হাজার টাকা করে দিয়েছি। কিন্তু ঘর পাইনি। এখন ঘরের কথা বললে বলে, সরকার যেদিন দিবে সেদিন পাবেন। ভ্যান চালক শাহজাহান শেখ, দিন মজুর ফারুকসহ এলাকার অনেকের কাছ থেকে ঘর দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছেন হারুন মেম্বর।
বিধবা শাহিদা বেগম বলেন, আমার স্বামী মারা যাওয়ার পরে মেম্বরের কাছে ঘুরেছি বিধবা কার্ডের জন্য। কার্ড পাওয়ার জন্য মেম্বরকে ৩০০ টাকা দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে ঝড়ে আমার ঘর পরে গেলে ঘর দেওয়ার জন্য এক হাজার টাকা চেয়েছিল। টাকা দিতে পারিনি, তাই ঘরও পাইনি।
হতদরিদ্র সুমী বেগম বলেন, মেয়েকে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে গেছিলাম জন্ম নিবন্ধন করতে। সেখানে উদ্যোক্তা মৌসুমী আক্তার এক হাজার টাকা দাবি করেন আমার কাছে। এক হাজার টাকা দিতে পারিনি। তাই মেয়ের বয়স চার বছর পার হলেও জন্ম নিবন্ধনও করাতে পারিনি। আসলে গরিবের জন্ম নিবন্ধন দিয়ে কি দরকার।
এসব অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মোস্তফা কামাল হারুনকে ফোন করা হলে তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। বলেন, যারা অভিযোগ দিয়েছে, তাদের সঙ্গে কথা বলেন। আমাকে ফোন দিয়েছেন কেন? যারা অভিযোগ দিয়েছে, আমি তাদেরকে চিনি। আমার সঙ্গে আপনাদের কথা বলার দরকার নেই। অভিযোগ দিয়েছে, তদন্তে যা হয় হবে।
ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. শাহনাজ পারভীন বলেন, এলাকাবাসীর কাছ থেকে ইউপি সদস্য মোস্তফা কামাল হারুনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি রিপোর্টে অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।